দেশের কৃষি

বস্তায় আদা চাষ ফলন ভালো, লাভও বেশি

কিশোরগঞ্জের ভৈরবের বিভিন্ন গ্রামে বাড়ির আঙিনাসহ অনাবাদি জমিতে বস্তায় আদা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। এ বছর উপজেলার কালিকাপ্রসাদের ঝগড়ারচর, আতকাপাড়া, বাঁশগাড়ি, গজারিয়া ও মানিকদী ইউনিয়নে ৬ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছেন ওই এলাকার কয়েকজন কৃষক। ফলন ও লাভ ভালো হওয়ায় এ পন্থায় আদা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। আর এ পদ্ধতিতে আদা চাষ বৃদ্ধি করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করাও সম্ভব বলছেন উপজেলা কৃষি অফিস কর্মকর্তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, অনাবাদি জমিতে সারি সারি বস্তা দিয়ে সাজানো রয়েছে আদার বস্তা। বস্তায় আদার ফলনও শুরু হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে অনেকে তাদের বসতবাড়ির আঙিনা, কিংবা সুউচ্চ ভবনের ছাদেও এ পদ্ধতিতে আদা চাষ শুরু করেছে। চাষের জায়গাটি ছায়াযুক্ত হওয়ায় ফলনও ভালো হয়। প্রতি বস্তায় তিনটি করে বীজ রোপণ করতে হয়। এ পদ্ধতিতে আদা চাষে তুলনামূলক রোগবালাই কম এবং খরচও কম। এ বছর উপজেলার কালিকাপ্রসাদ, গজারিয়া ও শিবপুর ইউনিয়নের প্রায় ৬ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছেন কৃষকরা। প্রতি বস্তায় ১ কেজি করে হলেও ৬ হাজার কেজি আদা উৎপাদন হবে। যদিও একেকটি বস্তায় দেড় থেকে ২ কেজি আদা হওয়া সম্ভব। বস্তায় আদা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে উঠান বৈঠকসহ মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন উপসহকারী কৃষি অফিসাররা।

স্থানীয় কৃষক এনামুল হক, আব্বাস মিয়া ও আল আমিন বলেন, কৃষি অফিসের পরামর্শে আমাদের বাড়ির আঙিনায় পতিত জমিতে বস্তার মাঝে আদা চাষ করেছি। প্রথমে ভেবেছিলাম বস্তায় আদা চাষ করে আবার না লোকসান হয়। এখন দেখছি ফলন ভালো হচ্ছে। বস্তাপ্রতি খরচ মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, ফলনও ভালো। প্রতি বস্তায় এক থেকে দেড় কেজি আদা উৎপাদন হয়। আমরা প্রায় ২ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছি।

বস্তায় আদা চাষ করে বাড়তি আয় সম্ভব জানতে পেরে আগ্রহ বেড়েছে চিকিৎসক মো. মিজানুর রহমান কবিরের।

তিনি বলেন, ‘আমি পেশায় চিকিৎসক। চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি কৃষির প্রতি আমার বরাবরই আগ্রহ ছিল। আমার অনাবাদি জমিসহ বাড়ির আঙিনাতেও বিভিন্ন সবজিবাগান আর ফলদ গাছও লাগিয়েছি। বস্তায় আদা চাষ এটা আমার কাছে নতুন পদ্ধতি বলে মনে হয়েছে। কৃষি অফিসার আকলিমা বেগমের পরামর্শে আমার বাড়ির আঙিনাতে ১ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছি। বস্তাপ্রতি খরচ হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। আশা করছি, ১ হাজার বস্তায় কম করে হলেও প্রায় দেড় থেকে ২ হাজার কেজি আদা উত্তোলন করা যাবে। এটা সম্পূর্ণ দেশি জাতীয় আদা। এ আদা দিয়ে আমার নিজের চাহিদা পূরণ করে এলাকার চাহিদাও পূরণ করতে পারব।’

উপজেলা কৃষি অফিসার আকলিমা বেগম বলেন, ‘এ বছর ভৈরবে প্রায় ৬ হাজার বস্তায় আদা চাষ হয়েছে। মাঠপর্যায়ে আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শে উঠান বৈঠকসহ সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে আগ্রহ বাড়াতে কাজ করছেন। এভাবে আদা চাষ করলে খরচ কম, ফলনও ভালো হয়। পোকামাকড়ের উপদ্রব হয় না। এতে করে কৃষকরা অনেক লাভবান হতে পারবেন। পরিবারের চাহিদা মিটিয়েও বাণিজ্যিকভাবে বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবেও লাভবান হবেন শৌখিন আদাচাষিরা। দেশে আদা চাষে বস্তা পদ্ধতি বৃদ্ধি করা গেলে বিদেশ থেকে আদা আমদানি অনেকটাই কমানো সম্ভব হবে। এতে করে একসময় নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে আমরাই বিদেশে রপ্তানি করতে পারব।’

চাষী সেবা ডেস্ক

Leave a Reply