ডিপ্লোমা কৃষিবিদ সারোয়ার জাহান: আমাদের দেশে শীতকালীন সবজি গুলোর মধ্যে লাউ অন্যতম। লাউ যেমন সবজি হিসাবে অনেক সুস্বাদু তেমনি লাউয়ের পাতাও শাক হিসাবে অনেক উপাদেয়। আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রজাতির লাউ রয়েছে। জাতের প্রকার ভেদে এর আকার-আকৃতি ও বর্ণ ভিন্ন হয়। তবে বর্তমান সময়ে কিছু উচ্চ ফলনশীল জাতের চাষ হয় বলে প্রায় সারা বছরই এ সবজিটি বাজারে পাওয়া যায়। আপনি চাইলে আপনার ছাদের টবে বা ড্রামে লাউ চাষ করতে পারেন। এতে আপনার পরিবারের জন্য কিটনাশক ও বিষমুক্ত টাটকা সবজি যেমন পাবেন তেমনি বাড়তি ফলনে আর্থিক স্বাভলম্বীও হতে পারেন। লাউ এর আগাম ফলন পেতে মার্চ মাসেই ড্রামে বা টবে লাউ এর চারা রোপনের উপযুক্ত সময়।
উত্তম জাত নির্বাচন:
ভালো জাত নির্বাচন করলে আপনি ভালো ফলন পাবেন, তাই ভেবে চিন্তে উচ্চ ফলনশীল জাতের লাউ এর চারা নির্বাচন করুন। বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বারি লাউ-১ নামে উচ্চফলনশীল লাউয়ের একটি জাত উদ্ভাবন করেছে। এ জাতে একটি বৈশিষ্ট্য হলো এ জাতের লাউ সারা বছরই চাষ করা যায়। তাছাড়া বাজারে বিভিন্ন প্রকার হাইব্রিড লাউ যেমন: মার্টিনা, জুপিটার, যমুনা, কাবেরী ও পদ্মা চাষ করতে পারেন।
মাটি প্রস্তুত ও সার প্রয়োগ:
শাক-সবজি বীজতলার জন্য মাটি সব সময় নরম তুলতুলে থাকলে গাছ তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পায়, তাই মাটি হতে হবে ঝুরঝুরে, হালকা এবং পানি ধরে রাখার ক্ষমতা সম্পন্ন। মাটি থেকে বিভিন্ন আগাছা চালনি দিয়ে চেলে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে তাহলে চারাকে রোগবালাই থেকে রক্ষা করা সহজ হবে। জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দো-আঁশ, এঁটেল দো-আঁশ মাটি লাউ চাষের জন্য উত্তম। দুই ভাগ দো-আঁশ মাটির সঙ্গে দুই ভাগ জৈব সার মিলিয়ে নিয়ে বীজতলার মাটি তৈরি করে নিতে হয়। লাউ এর চারার জন্য ভালো সার হলো টিএসপি, এমপি, জিপসাম ও বোরক্স সার। কিন্তু আপনি জৈব সার হিসেবে গোবর ব্যবহার করলে ফলন ভালো হবে।
চারা তৈরি:
ভালো চারা তৈরি করতে ছোট পলি ব্যাগে বীজ বপন করাই উত্তম। লাউ এর বীজ বপনের পূর্বে বীজকে অন্তত ১২ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর সার মিশ্রিত মাটি পলি ব্যাগে ভরে তার মাঝে দুটি করে বীজ তার আকারের দ্বিগুণ মাটির গভীরে বুনতে হবে এবং প্রতিদিন সকাল-বিকাল পানি দিতে হবে।
টবে বা ড্রামে চারা রোপণ:
লাউ বীজ থেকে চারা গজানোর পর ১৬-১৭ দিন বয়সের চারা টবে বা ড্রামে লাগানোর জন্য উপযুক্ত হয়। ছাদে টবে বা ড্রামে লাউ চাষের ক্ষেত্রে
প্রতিটা চারা কে পলি ব্যাগ থেকে বের করে টবে বা ড্রামে রোপন করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি প্রতিটি চারার জন্য আলাদা আলাদা টব বা ড্রামের ব্যবস্থা করা যায়। টব বা ড্রামগুলোকে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে স্থাপন করুন এবং নিবিড় পরিচর্যায় রাখুন। মাচায় লাউয়ের ফলন বেশী হয় তাই উত্তম ভাবে মাচা তৈরি করে দিলে অধিক ফলন আশা করা যায়।
লাউ গাছের পরিচর্যা:
লাউ গাছের প্রচুর পানি প্রয়োজন হয় তাই গাছের পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ নিশ্চির করতে প্রতিদিন সকাল বিকাল পানি সেচ দিতে হবে। আপনার গৃহের প্রতিদিনের মাছ মাংস ধোয়া পানি মাঝে মধ্যে লাউ গাছে দিবেন এতে বিশেষ উপকার পাবেন। খেয়াল রাখবেন টবে বা ড্রামে লাউ গাছের প্রয়োজনীয় পানির অভার হলে ফলন ব্যাহত হবে এবং ফল ছোট অবস্থাতেই ঝরে যাবে উপরন্তু টবে বা ড্রামে লাউ চাষ করতে পানি একটু বেশি প্রয়োজন হয়। তাছাড়া ড্রামের আগাছা পরিস্কার রাখুন, মাসে অন্তত কয়েক বার লাউ এর পাতা সংগ্রহ করুন এবং লাউ গাছে সর্বদা যথেষ্ট সূর্যের আলো ও বাতাসের ব্যবস্থা করুন এতে ফলন আরো ভালো হবে।
গাছের সঠিক পরিচর্যা নিশ্চিত করতে এর গোড়ায় নিয়মিত ইউরিয়া সহ, কচুরিপানা ও নানা ধরণের জৈব সার প্রয়োগ করুন। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই সার গাছের গোড়া থেকে ৬ ইঞ্চি দূর মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে।